বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থ- আল্লাহর নাম নিয়ে পড়া শুরু করছি, যিনি সীমাহীন দয়ালু এবং সীমাহীন করুণাময়।
নাযিল : মাক্কাহ, আয়াত : 56 টি।
আল্লাহ নাবী (সা) কে আদুরে সম্বোধন করছেন।
74:1 নং আয়াহ : হে চাদর [73:1] জড়ানো ব্যক্তি,
# নাবী (সা) বলেছেন- “একদা আমি হাঁটছি, হঠাৎ আকাশ হতে একটি শব্দ শুনতে পেয়ে আমার দৃষ্টিকে উপরে তুললাম। দেখলাম- সেই ফেরেস্তা, যিনি হেরা গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন। আকাশ জুড়ে একটি আসনে উপবিষ্ট। এতে আমি ভীত হলাম। অবিলম্বে আমি ফিরে এসে বললাম- “আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর”। অতঃপর আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন- “হে চাদর জড়ানো ব্যক্তি, উঠুন সতর্ক করুন…”(বুখারী, হাদীশ 4)।
নাবী (সা) চাদর জড়িয়ে শুয়ে ছিলেন, উঠার নির্দেশ।
74:2 নং আয়াহ : উঠুন [73:2], অতঃপর সতর্ক করুন।
# অর্থাৎ উঠুন, আপনি ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চাদর জড়িয়ে শুয়ে থাকার জন্য প্রেরিত হন নি।
‛আল্লাহু আকবার’ বলার নির্দেশ।
74:3 নং আয়াহ : আর আপনার প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব [17:111] ঘোষণা করুন।
# হাদীশ অস্বীকারকারী বলে থাকেন- ‛আল্লাহু আকবার’ পবিত্র কুরআনে নেই। তাই আল্লাহু আকবার বলা যাবে না। অথচ আল্লাহ বলছেন- “আপনার প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন”। এখন কিভাবে ঘোষণা করবেন?? আমরা বলি- আল্লাহু আকবার/ আল্লাহ শ্রেষ্ঠ।
চিন্তা ভাবনা/ কাজ কর্ম স্বচ্ছ রাখার নির্দেশ।
74:4 নং আয়াহ : এবং আপনার চিন্তা ভাবনা/ কাজ কর্মে স্বচ্ছতা রাখুন।
গোঁড়ামি/ কুসংস্কার ধ্বংস করার নির্দেশ।
74:5 নং আয়াহ : গোঁড়ামি/ কুসংস্কার ধ্বংস [62:2] করে ফেলুন।
প্রয়োজনের বেশি কামনা নাবী (সা) এর জন্য নিষিদ্ধ ছিল।
74:6 নং আয়াহ : এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কামনা করবেন না।
# নাবী (সা) বলেছেন- “আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড়ের সম পরিমাণ সোনা থাকত, তাহলেও আমার পছন্দ নয় যে, 3 দিন পর তার কিছু অংশ আমার কাছে থাকুক। তবে যদি আমার ঋণ থাকে, তাহলে তা পরিশোধ করার জন্য যতটা প্রয়োজন, ততটা রেখে সমস্ত সোনা দান করে দিই” (বুখারী, হাদীশ 2389)। অর্থাৎ নাবী (সা) প্রয়োজনের বেশি কিছুই রাখতেন না।
ধৈর্য্য ধারণ শুধু আল্লাহর জন্য।
74:7 নং আয়াহ : আর ধৈর্য্য ধারণ [46:35, 70:5] করুন শুধু আপনার প্রভুর জন্য।
তৃতীয় বার শিংগায় ফুঁ।
74:8 নং আয়াহ : যাইহোক, যখন (তৃতীয় বার) শিংগায় ফুঁ দেওয়া [36:51-52, 37:20] হবে,
বিচার দিবস খুবই কঠিন হবে।
74:9 নং আয়াহ : এতএব সেই দিনটি হবে খুবই [78:37] কঠিন।
বিচার দিবস সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য ভয়ঙ্কর হবে।
74:10 নং আয়াহ : যে দিনটি সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য মোটেও [4:42, 78:40] সহজ হবে না।
ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ সম্পর্কে আয়াত সমূহ।
74:11 নং আয়াহ : আমাকে ছেড়ে দিন এবং যাকে আমি একাই [18:51] সৃষ্টি করেছি, তাকেও।
74:12 নং আয়াহ : এবং আমি তাকে প্রদান করেছি বিপুল পরিমাণ ধন সম্পদ।
74:13 নং আয়াহ : এবং তাকে প্রদান করেছি অনেক পুত্র, যারা তার সঙ্গে সর্বদা উপস্থিত থাকে।
74:14 নং আয়াহ : এবং তাকে প্রদান করেছি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন।
74:15 নং আয়াহ : এরপরও সে কামনা করে যে, তাকে আমি আরও দিই।
74:16 নং আয়াহ : কখনও নয়, নিশ্চয়ই সে আমাদের আয়াত সমূহের [69:49-50] বিরোধী।
74:17 নং আয়াহ : শীঘ্রই আমি তার উপর শাস্তির পাহাড় চাপিয়ে দেব।
74:18 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই সে চিন্তা ভাবনা করলো এবং সিদ্ধান্ত নিল।
74:19 নং আয়াহ : সে ধ্বংস হবে। কিভাবে সে এমন সিদ্ধান্ত নিল??
74:20 নং আয়াহ : আবার বলছি- সে ধ্বংস হবে। কিভাবে সে এমন সিদ্ধান্ত নিল??
74:21 নং আয়াহ : তারপর সে (মানুষদের দিকে) তাকিয়ে দেখলো।
74:22 নং আয়াহ : তারপর সে ভ্রু-কঞ্চিত করলো এবং মুখ বাঁকালো।
74:23 নং আয়াহ : তারপর সে পিছনে ফিরলো এবং অহংকার করলো।
কুরআন সম্পর্কে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরাহ যা বলতেন।
74:24 নং আয়াহ : অতঃপর শেষে সে বললো- “এটা (কুরআন) ‛পূর্ব যুগ থেকে চলে আসা’ যাদু ছাড়া অন্য কিছু নয়।
74:25 নং আয়াহ : আর এটা (কুরআন) তো মানব রচিত কথা [2:23, 10:38] ছাড়া অন্য [4:82] কিছু হতে পারে না”।
সাকার/ সংকোচিত মহাবিশ্ব কেমন হবে??
74:26 নং আয়াহ : শীঘ্রই আমি তাকে ‛সাকার’/ সংকোচিত পৃণ্ডে ছেড়ে [19:72, 69:16-17] দেওয়া হবে।
নাবী (সা) সাকার/ সংকোচিত মহাবিশ্ব আসলে কি।
74:27 নং আয়াহ : আপনি কি জানেন- সাকার আসলে কি??
সংকোচিত মহাবিশ্বের অভিকর্ষ বল হবে মারাত্মক।
74:28 নং আয়াহ : যা রাখেও না এবং ছাড়েও না।
74:29 নং আয়াহ : (অভিকর্ষ বল) তা মানুষের শরীর থেকে চামড়া/ মাংস ছিঁড়ে নিতে চাইবে।
সংকোচিত মহাবিশ্বে ফেরেস্তা থাকবেন ঊনিশ জন।
74:30 নং আয়াহ : (জেনে রাখা উচিৎ) তার উপরে থাকবে ঊনিশ [43:77]।
# এই একত্রিত/ সংকোচিত মহাবিশ্বে দ্বিতীয় বিগব্যাঙ ঘটবে। এর মাধ্যমে নতুন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হবে। সেই নতুন সৃষ্ট মহাবিশ্বের Galaxy গুলোর নক্ষত্র গুলোই হবে এক একটি জাহান্নাম (77:33)।
74:31 নং আয়াহ : আর আমরা আগুনের (জাহান্নামের) দায়িত্ব প্রদান করেছি ফেরেস্তাদেরকে। আমরাই তাদের সংখ্যা (ঊনিশ) নির্ধারণ করেছি। তা কাফির/ সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য বিপদ। যেন যারা পূর্বে কিতাব পেয়েছিল, তারা দৃঢ় ভাবে সত্য গ্ৰহণ করতে পারে এবং যারা মূমীনদের/ সত্য স্বীকারকারী, তাদের ইমান/ সত্যের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় [48:4]। এবং যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল এবং মূমীনরা সন্দেহ না করে। এবং যাদের মস্তিষ্ক সমূহে রোগ/ সংশয় রয়েছে ও যারা কাফির (সত্য অস্বীকার কারী) তার বলে- “আল্লাহ এই ধরণের উদাহরণ দ্বারা কি বলতে চাইছেন”?? এভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন [2:26, 2:99, 4:115] এবং যাকে ইচ্ছা তাকে পথ দেখান [13:27, 42:13]। এবং আপনার প্রভুর বাহিনী/ ফেরেস্তা [48:4] সম্পর্কে তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানেন না। আর তা (কুরআন) মানুষজাতির জন্য সংবিধান ছাড়া কিছুই নয় [81:27]।
চাঁদের কারণে গাছপালা সমূহ পানি পায়।
74:32 নং আয়াহ : কখনও নয়, শপথ চাঁদের [84: 18-19]।
# আরবিতে ‛শপথ’ করার রীতি রয়েছে। কিন্তু শপথ করা হয় কেন?? কোনও কিছুর গুরুত্ব বোঝাতে শপথ করা হয়ে থাকে। প্রশ্ন হবে- “চাঁদের সঙ্গে গাছপালার সম্পর্ক কোথায়”?? সম্পর্ক আছে। আসলে চাঁদ গাছপালা বাঁচিয়ে রাখতে কতটা ভূমিকা পালন করে, সেটা বোঝাতেই এখানে চাঁদের শপথ করা হয়েছে।
প্রশ্ন হবে- “চাঁদের কারণে গাছপালা পানি পায়, এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি”?? আসলে চাঁদের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয়। জোয়ারের কারণে নদনদীতে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়, খালবিলে পানি পৌঁছায়। ফলতঃ পৃথিবীর বড় একটা ভূভাগ পানির সংস্পর্শে আসে। ফল স্বরূপ গাছপালা পানির সাহায্যে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করতে পারে। যাকে সালোকসংশ্লেষ বলা হয়। ফলতঃ আমরা অক্সিজেন পাই (36:80)।
রাতে সালোকসংশ্লেষ বন্ধ থাকে, ভোরে শুরু হয়।
74:33 নং আয়াহ : শপথ রাতের, যখন তা (সালোক সংশ্লেষ) বন্ধ হয়ে যায়।
74:34 নং আয়াহ : শপথ ভোরের, যখন তা (সালোক সংশ্লেষ) শুরু হয় [81:18]।
‛গাছ কাটা’ এক মহাবিপদ।
74:35 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই তা (গাছ কাটা) মহাবিপদ গুলোর অন্যতম [55:35, 44:10-11]।
‛গাছ কাটা’ বিপদ সংকেত।
74:36 নং আয়াহ : তা (গাছ কাটা) মানবজাতির জন্য সতর্কবার্তা [13:41, 21:44]।
আল্লাহ গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করছেন।
74:37 নং আয়াহ : তার জন্য, তোমাদের মধ্যে যে (গাছ লাগানোর জন্য) এগিয়ে আসতে* চায় কিংবা পিছনে থেকে যেতে চায়।
# একটি হাদীশ- “যদি পৃথিবীর ধ্বংসের ক্ষণ এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারোর হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপন করে দেয়”(আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীশ 479)।
প্রত্যেকেই নিজ কর্মের জন্য দায়ি।
74:38 নং আয়াহ : প্রত্যেক নাফস/ সত্ত্বা তার নিজ কর্মের/ পাপের জন্য দায়ি [52:21]।
ডান হাত ওয়ালাদের নিজ পাপের জন্য দায়ি করা হবে না।
74:39 নং আয়াহ : তবে ডান হাত ওয়ালাদের ব্যাপারটা ভিন্ন [90:17-18, 84:7-9]।
ডান হাত ওয়ালারা জান্নাতী।
74:40 নং আয়াহ : তারা জান্নাতে [56:27-40] থাকবে এবং পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করবে,
74:41 নং আয়াহ : অপরাধীদের সম্পর্কে।
# প্রায় এর কাছাকাছি একটা বক্তব্য রয়েছে 37:50-55 এ। তবে পরিস্থিতিটা ভিন্ন।
জান্নাতীরা জাহান্নামীদের যা জিজ্ঞাসা করবে।
74:42 নং আয়াহ : “কোন কারণে তোমাদেরকে সাকার/ একত্রিত পৃণ্ডে রেখে [69:16:17, 84:1-5] দেওয়া হল”??
যাদের জন্য শাফায়াত কাজে আসবে না।
74:43 নং আয়াহ : তারা বলবে- “আমরা মুস্বাল্লী (আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠাকারী) ছিলাম না,
74:44 নং আয়াহ : এবং আমরা মিসকীন/ নিরুপায় দরিদ্রদের খাবার দিতাম না [51:19, 79:24-25],
74:45 নং আয়াহ : এবং আমরা (সত্যের বিরোধীতা করার) জন্য আলোচনায় নিমগ্ন থাকতাম,
74:46 নং আয়াহ : আর বিচার দিবসকে মিথ্যা বলে ধারণা করতাম,
74:47 নং আয়াহ : যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের সামনে ইয়াকীন/ মৃত্যু হাজির হয়েছে”।
74:48 নং আয়াহ : সুতরাং তাদের জন্য শাফাআত কারীদের শাফাআত কোনও কাজে আসবে না।
ইসলামোফোবিয়া তখনও ছিল।
74:49 নং আয়াহ : আচ্ছা তাদের কি হয়েছে যে, তারা সংবিধান (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়??
74:50 নং আয়াহ : যেন তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়নরত বন্য গাধা সমূহ।
74:51 নং আয়াহ : যেন সিংহের সামনে থেকে পলায়ন করছে।
# আসলে ইসলামকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। পবিত্র কুরআন পড়ুন, গবেষণা করুন (38:29, 47:24)। আর এটা আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব (80:23)। যদি মনে হয় সত্য, গ্ৰহণ করুন। যদি মিথ্যা মনে হয়, তাহলে অস্বীকার করুন। পবিত্র কুরআন অস্বীকার করার স্বাধীনতাও আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন (18:29, 76:3)।
বহু সংশয়বাদী, নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষীদের ইচ্ছা।
74:52 নং আয়াহ : বরং তাদের মধ্যে প্রত্যেকই এমনটা চায় যে, তাকে দেওয়া হোক (কুরআনের মতো) উন্মুক্ত গ্ৰন্থ সমূহ [17:93]।
74:53 নং আয়াহ : কখনও (দেওয়া হবে) না [6:7]। বরং তারা পরবর্তী জীবনকে (জাহান্নামকে) ভয় করে না।
কুরআন আসলে কি??
74:54 নং আয়াহ : কখনও না। নিশ্চয়ই তা (কুরআন) সংবিধান/ জীবন বিধান [81:27]।
কুরআন ‛গ্ৰহণ করা/ না করা’ ব্যক্তি স্বাধীনতা।
74:55 নং আয়াহ : এখন যে চায়, সে তা (কুরআন) থেকে বিধান গ্ৰহণ করুক [88:21-22, 2:265]।
আল্লাহ জবরদস্তিকারী নন।
74:56 নং আয়াহ : তবে (যারা তা গ্ৰহণ করবে না), তারা বিধান করতে চাইবেও না, অবশ্য আল্লাহ (জোরজবরদস্তি করতে) চাইলে ভিন্ন কথা [32:13, 26:4]। তিনি তাকওয়া অবলম্বনকারী [7:28, 2:68] ও ক্ষমাদান কারী [39:53, 25:70]।