বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থ- আল্লাহর নাম নিয়ে পড়া শুরু করছি, যিনি সীমাহীন দয়ালু এবং সীমাহীন করুণাময়।
নাযিল : মাক্কাহ, আয়াত : 88 টি।
কুরআন সর্বোচ্চ জ্ঞান ধারণকারী।
38:1 নং আয়াহ : স্বাদ [15:1, 31:1-2]। শপথ কুরআনের, যা সর্বোচ্চ জ্ঞান ধারণকারী [45:20]।
ইসলামোফোবিয়া তখনও ছিল, এখনও আছে।
38:2 নং আয়াহ : কিন্তু যারা সত্য অস্বীকার করেছে, তারা (কুরআনের/ ইসলামের) প্রতি উগ্ৰতা ও বিরোধিতায় লিপ্ত।
আল্লাহ লক্ষ লক্ষ/ কোটি কোটি সভ্যতা ধ্বংস করেছেন।
38:3 নং আয়াহ : আমরা এদের পূর্বে কতশত জনপদকে ধ্বংস করেছি [32:26, 30:9]। তারা চিৎকার করেছিল, কিন্তু তখন বাঁচার উপায়/ সময় ছিল না [7:4]।
মাক্কাহবাসী এ কারণেও নাবী (সা) কে অস্বীকার করেছিল।
38:4 নং আয়াহ : এরা কি অবাক হচ্ছে যে, এদের কাছে এদের মধ্যে থেকে এসেছে একজন সতর্ককারী [62:4, 42:52, 10:2, 10:16]?? (এজন্য) সত্য অস্বীকারকারীরা বলে- “এই ব্যক্তি জাদুকর ও মিথ্যাবাদী” [51:52,3:184, 35:4, 21:41]।
মাক্কাহবাসী আল্লাহ প্রসঙ্গে যেভাবে নাবী (সা) কে ব্যঙ্গ করতেন।
38:5 নং আয়াহ : (তারা এও বলে) “সে কি সমস্ত ঈশ্বর/ উপাস্যকে মিলিয়ে এক জন ঈশ্বর/ উপাস্য [21:22, 23:91] বানিয়ে দিয়েছে?? নিশ্চয়ই এটা আজব ব্যাপার”!
# আসলে প্রচলিত ধর্ম গুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বর রয়েছেন। যেমন- আকাশের দেবতা, পৃথিবীর দেবতা, বায়ুর দেবতা, বৃষ্টির দেবতা ইত্যাদি। কিন্তু ইসলামে আল্লাহ সর্বেসর্বা। তাই তারা এভাবে ইসলাম/ আল্লাহ/ নাবী (সা) কে ব্যঙ্গ করতেন।
মাক্কাহর গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যা যা বলত।
38:6 নং আয়াহ : তাদের মধ্যে গণ্যমান্যরা এই বলে চলে গেল যে, “তোমরা যাও এবং তোমাদের ঈশ্বর/ উপাস্যদের উপাসনা করতে থাক [33:67-68]। নিশ্চয়ই এটা (মুহাম্মাদের) উদেশ্য মূলক ব্যাপার।
তারা অন্যান্য ধর্মের প্রচলিত রূপের উদাহরণ দিত।
38:7 নং আয়াহ : আমরা অতীতের প্রচলিত অন্যান্য ধর্মে এই সম্পর্কে কোনও কিছু শুনি নি। এটা (ইসলাম) মানব রচিত (ধর্ম) ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়”।
# কিন্তু ইসলাম নতুন কোনও ধর্ম নয়, ইসলামের বিধানও নতুন নয় (41:43, 42:13)। আর ইসলাম ছাড়া আল্লাহ ভিন্ন কোনও ধর্ম প্রেরণ করেন নি (3:19, 2:213)। পার্থক্য শুধু একারণে যে, ঐ সমস্ত ধর্মের গণ্যমান্যরা ধর্মকে বিকৃত করেছেন। যেমন খৃষ্টান ধর্ম বিকৃত করেছেন সাধু পল। এই সাধু পল যিশু/ ঈশা (আ) এর শিক্ষার বিরুদ্ধে বিধান দিয়েছেন।
এই প্রশ্নটা মাক্কাহবাসী প্রায়ই করত।
38:8 নং আয়াহ : (এও বলে) “আমাদের মধ্যে থেকে তার উপরেই কেন [43:31-32, 62:4, 10:16] সংবিধান/ কুরআন নাযিল হল”?? তারা আমার (নাযিলকৃত) সংবিধান সম্পর্কে সন্দেহ করে। (তা সত্ত্বেও) তারা এখনও আমার শাস্তির স্বাদ (১) গ্রহণ করেনি।
১ অর্থাৎ তারা আমার (আল্লাহর) এত বিরোধীতা এখনও পর্যন্ত আমার শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করেনি- এটা তাদের প্রতি আমার দয়া।
মাক্কাহবাসীর উপর আল্লাহর দয়া তাদের প্রাপ্য অধিকার নয়।
38:9 নং আয়াহ : তবে কি তাদের কাছে আছে আপনার প্রভুর রহমত/ দয়ার ভান্ডার সমূহ, যিনি মহা শক্তিশালী ও মহা দাতা!
মাক্কাহবাসী সহ নাস্তিকদেরকে আল্লাহর চ্যালেজ্ঞ।
38:10 নং আয়াহ : নাকি মহাবিশ্বে, পৃথিবীতে ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, সেই সমস্ত কিছুর উপর তাদের তৈরি করা আইন চলছে?? তাহলে তারা (নিজেদের তৈরি করা আইন অনুযায়ি) মহাবিশ্ব ভ্রমণ করে দেখাক।
# মহাবিশ্বের আইন আল্লাহর তৈরি (7:54, 25:2)। মহাবিশ্ব ভ্রমণ করতে চাইলে মহাবিশ্বের আইন তথা নিয়মনীতি মেনেই মহাবিশ্ব ভ্রমণ করতে হবে। নিজেদের তৈরি করা আইন তথা নিয়মনীতি দ্বারা মহাবিশ্ব ভ্রমণ সম্ভব নয়। যদিও মানুষ একদিন মহাবিশ্ব ভ্রমণ করবে (12:105) এবং মহাবিশ্বের বাইরেও যাবে (55:33)। কিন্তু সেই সমস্ত কিছু সম্ভব হবে মহাবিশ্বের উপর লাগু করা আল্লাহর আইন মেনে। মানুষ একদিন মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণও করবে (45:13)। কিন্তু সেটাও মহাবিশ্বের উপর লাগু করা আল্লাহর আইন মেনে।
মাক্কাহর কুরাইশরা মাক্কাহতেই পরাজিত হবার ভবিষ্যৎ বাণী।
38:11 নং আয়াহ : এই বাহিনী এখানেই [28:85] পরাজিত হবে। যেভাবে অন্যান্য (বাহিনী গুলো) পরাজিত হয়েছিল [37:173]।
পিরামিড সমূহ ফিরআউনদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
38:12 নং আয়াহ : এদের পূর্বে অস্বীকার করেছিল নূহের জাতি, আদ জাতি ও পিরামিড (১) সমূহের মালিক [89:10, 11:100] ফিরআউনের জাতি।
১ এখানে আরবি শব্দ ‛আওতাদ’। যার অর্থ- পেরেক/ পেরেক সমূহ। কোনও উঁচু নির্মাণকে বোঝাতে আওতাদ শব্দের ব্যবহার করা হয়। এখানে পিরামিড সমূহেকে উদেশ্য করে আওতাদ শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন 78:7 এ পাহাড় পর্বতকে ‛পেরেক’ বলা হয়েছে।
অন্যান্য জাতিও তাদের রাসূলকে অস্বীকার করেছিল।
38:13 নং আয়াহ : আর সামূদ জাতি, লূতের জাতি এবং আইকার অধিবাসীরা। তারা ছিল বাহিনী [38:11]।
38:14 নং আয়াহ : তারা সমস্ত রাসুলকে অস্বীকার করেছিল [50:14]। অতঃপর আমার শাস্তির ঘোষণা সত্যে পরিণত হয়েছিল।
# প্রশ্ন হবে- “কিন্তু তারা তো সমস্ত রাসূলদেরকে অস্বীকার করেন নি, তারা শুধু তাদের কাছে প্রেরিত রাসূলকে অস্বীকার করেছিল”! বিস্তারিত উত্তর রয়েছে 73:15 এর টিকায়।
ব্যাঙ্গ ও বিদ্রুপ স্বরূপ শিংগা ধ্বনীর অপেক্ষা করত মাক্কাহবাসী।
38:15 নং আয়াহ : তারা অপেক্ষা করছে শুধু একটি মাত্র শব্দের [27:87], যা তাদেরকে কোনও সুযোগ দেবে না।
# তারা বলতেন- “যদি কিয়ামত দিবস সত্য হয়ে থাকে, তবে নিয়ে এস কিয়ামত এবং তার আগে বল যে, শিংগা ধ্বনি কবে/ কখন আসবে”!
তারা ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ স্বরূপ তাদের অপকর্মের পাওনা/ শাস্তি চাইত।
38:16 নং আয়াহ : এবং তারা (ব্যঙ্গ করে) বলে- “হে আমাদের প্রভু, আমাদের আমাদের পাওনা দিয়ে দিন হিসাব দিবসের পূর্বেই” [68:33, 3:185]।
দাউদ (আ) ছিলেন প্রযুক্তি শক্তির অধিকারী।
38:17 নং আয়াহ : ধৈর্য্য ধারণ করুন, তারা যা বলছে সেই ব্যাপারে [70:5, 15:97]। আর শুনুন আমাদের বান্দা দাউদের কাহিনী। তিনি ছিলেন (প্রযুক্তি) শক্তির অধিকারী। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন (আল্লাহ) অভিমুখী।
পাহাড় পর্বত ছিল দাউদ (আ) এর নিয়ন্ত্রণাধীন।
38:18 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আমরা পাহাড় পর্বতকে তার নিয়ন্ত্রাণাধীন করে দিয়েছিলাম। তারা তার সঙ্গে (আল্লাহর) পবিত্রতা [59:1, 17:44] বর্ণনা করত [21:79, 34:10]।
# প্রশ্ন হবে- “পাহাড় পর্বত কিভাবে তার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল এবং কিভাবে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করত”?? কিভাবে পবিত্রতা বর্ণনা করত, এটা জানতে 41:21 এর টিকা দেখুন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, পাহাড় পর্বত কিভাবে নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল! এতে এত অবাক হওয়ার কিছুই নেই। মহাবিশ্ব একদিন মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে যাবে (45:13)। সুতরাং পাহাড় পর্বত তো সেখানে শিশু।
আমরা আগে থেকেই ধরে নিচ্ছি যে, আজ বিজ্ঞানের যুগে আমরা এখনও পাহাড় পর্বতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নি, সেক্ষেত্রে আজ হতে হাজার হাজার বছর আগে কিভাবে দাউদ (আ) পাহাড় পর্বতকে নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন! কিন্তু এক্ষেত্রে বলব যে, আজ হতে হাজার হাজার বছর আগে উন্নত সভ্যতা থাকতেও পারে তো (30:9)।
কি রকম নিয়ন্ত্রণ! যেমন আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। আমরা পাহাড় পর্বতে নদী বাঁধ তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। এছাড়াও পাহাড় পর্বতে বায়ুকল লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। আবার পাহাড় পর্বতে সুড়ঙ্গ করে রাস্তা নির্মাণ করছি। এরকম হতে পারে অথবা পাহাড় পর্বত স্থানান্তরিত করার মতো বিষয়ও হতে পারে (14:46)। যদিও এই প্রযুক্তি এখনও আমাদের হাতে আসে নি, তবে ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তি আমাদের হাতে আসবে। এখানে হয়ত সেই সম্ভাবনার কথাই বলা হচ্ছে।
‛উড়ন্ত যান’ সমূহ ছিল দাউদ (আ) এর অনুগত।
38:19 নং আয়াহ : উড়ন্ত যান সমূহ [34:10] সমবেত হোত। তারা সবাই ছিল তার হুকুমের অধিন।
# ‛উড়ন্ত যান’ বলতে?? এরোপ্লেন থেকে শুরু করে UAV বা Unmanned Aerial Vehicle সহ সমস্ত কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমন- ড্রোন, রকেট ইত্যাদি।
দাউদ (আ) ছিলেন বিজ্ঞানী ও প্রভাব সৃষ্টিকারী বক্তা।
38:20 নং আয়াহ : আর আমরা তার শাসনকে সুদৃঢ় করেছিলাম। তাকে প্রদান করেছিলাম বিজ্ঞানের জ্ঞান এবং ভাষণ দেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা।
দাউদ (আ) কে আল্লাহ যেভাবে পরীক্ষা করেছিলেন।
38:21 নং আয়াহ : আপনার কাছে কি বিবাদকারীদের তথ্য পৌঁছেছে, যখন তারা প্রাচীর ডিঙিয়ে মিহরাবে (১) ঢুকে পড়েছিল??
১ বিশেষ ভাবে তৈরি ঘর/ মহল। বিশেষ করে ইবাদতের জন্য তৈরি করা ঘর/ মহল।
38:22 নং আয়াহ : যখন তারা প্রবেশ করে পৌঁছে গেল দাউদের কাছে, তখন তিনি তাদের থেকে ভয় পেয়ে গেলেন। (তারা বলল) “ভয় পাবেন না, আমরা বিবাদকারী দুই পক্ষ। আমারা একে অপরের প্রতি উগ্ৰতা অবলম্বন করেছি। সুতরাং আপনি আমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করে দিন, অবিচার করবেন না। আমাদেরকে সঠিক পথনির্দেশনা দিন।
38:23 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই এই ব্যক্তি আমার ভাই, তার আছে নিরানব্বই টি দুম্বী/ ভেড়ী। আর আমার আছে মাত্র একটি। তাও সে বলছে- “তা আমার দায়িত্বে দিয়ে দাও”। আর সে আমাকে তার বক্তব্য/ যুক্তি কথা দ্বারা হারিয়ে দিল।
38:24 নং আয়াহ : তিনি (দাউদ) বললেন- “তোমার দুম্বী/ ভেড়ীর সঙ্গে তার গুলোকে যুক্ত করে অবশ্যই সে তোমার উপর অবিচার করেছে। নিশ্চয়ই অনেকেই একত্রিত ভাবে থাকায় (১) একে অপরের প্রতি উগ্ৰতা সৃষ্টি করে ফেলে। তবে যারা ইমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তারা ছাড়া। আর তারা সংখ্যায় খুবই কম হয়ে থাকে। তখন দাউদ বুঝতে পারলেন যে, আমরা তাকে পরীক্ষা করেছি। তখন তিনি তার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এবং নত হয়ে (সিজদায়) লুটিয়ে পড়ল [17:107]। কেননা, তিনি ছিলেন (আল্লাহ) অভিমুখী।
❤️ সিজদাহর আয়াহ ❤️
১ ‛একত্রিত ভাবে’ বলতে কি?? একত্রিত সংসার/ জয়েন্ট ফ্যামিলি হতে পারে, একত্রিত ব্যাবসা/ ভাগে ব্যাবসাও হতে পারে।
দাউদ (আ) ‛বিশেষ পরীক্ষায়’ ভুল করলেন, আল্লাহ ক্ষমা করলেন।
38:25 নং আয়াহ : আমরা তার ‛ভুল’ ক্ষমা [42:25, 15:49] করলাম। আর নিশ্চয়ই তার জন্য আমাদের কাছে আছে নৈকট্যের মর্যাদা ও উত্তম পরিণাম/ উত্তম প্রত্যাবর্তন স্থল [38:40]।
প্রতিনিধিত্ব মূলক শাসন ব্যবস্থা/ গণতন্ত্র।
38:26 নং আয়াহ : (এরপর বলা হল) হে দাউদ, আমরা আপনাকে ভূখণ্ডে বানিয়েছি (মানুষের) খলিফা/ প্রতিনিধি [24:55]। সুতরাং মানুষের মাঝে ন্যায়পূর্ণ ভাবে শাসন পরিচালনা করতে থাকুন। আর অনুসরণ করবেন না খেয়াল খুশির [6:56, 45:18]। তাহলে তা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়, তাদের জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি। এ জন্য যে, তারা ভুলে গিয়েছে হিসাব দিবসকে।
# প্রশ্ন হবে- “গণতন্ত্র বলতে কি ভোট ব্যবস্থা ছিল”?? হ্যাঁ, ছিল। পবিত্র কুরআনে এর সমর্থনে সুলাইমান (আ) এর একটি বক্তব্য রয়েছে। যেখানে তিনি জনগণের থেকে ভোট চাইছেন (27:16)।
আমাদের মহাবিশ্ব উদেশ্যহীন ভাবে সৃষ্টি করা হয় নি।
38:27 নং আয়াহ : আর মহাবিশ্ব, পৃথিবী ও যা কিছু আছে এই দুইয়ের মধ্যে, তা আমরা উদেশ্যহীন [3:191, 21:16] ভাবে সৃষ্টি করি নি। ওটা তাদের ধারণা, যারা সত্য অস্বীকারকারী/ করেছে। সুতরাং যারা সত্য অস্বীকারকারী/ করেছে, তাদের জন্য থাকবে আগুনের দুর্ভোগনা।
# “উদেশ্য ছাড়া সমস্ত কিছুই সৃষ্টি হয়েছে”- এমন বোকার কথাবার্তা বলে থাকেন সত্য অস্বীকারকারীরা/ নাস্তিকরা। অথচ প্রতিটা সৃষ্টির কার্যকারিতা রয়েছে, আর তা বিজ্ঞানে প্রমাণিত। প্রশ্ন হবে- “মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদেশ্য কি”?? উত্তর রয়েছে 45:22, 10:4, 30:11 ও 69:16-17 আয়াতে।
সন্ত্রাসী ও পাপীরা, মুসলিম ও মুত্তাকীদের সমান নয়।
38:28 নং আয়াহ : যারা সত্য স্বীকার করে ও সৎকর্ম করে, আমরা তাদেরকে কি ভূ-পণ্ডে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের সমান গণ্য করব?? নাকি মুত্তাকী (অপকর্ম থেকে দূরত্ব অবলম্বন কারী) দেরকে পাপীদের সমান গণ্য [68:35] করব??
কুরআনের আয়াত সমূহ নিয়ে গবেষণার নির্দেশ।
38:29 নং আয়াহ : আমরা আপনার কাছে একটি কল্যাণকর কিতাব নাযিল করেছি, যেন তারা তার আয়াত সমূহ নিয়ে গবেষণা [47:24] করে। আর তারাই পরামর্শ গ্ৰহণ করে, যারা বোধ-বুদ্ধি সম্পন্ন।
দাউদ (আ) এর পুত্র সুলাইমান (আ) কেমন ছিলেন??
38:30 নং আয়াহ : আর আমরা দাউদকে (পুত্র হিসাবে) সুলাইমান প্রদান করলাম [27:15-44]। (তিনি ছিলেন) উত্তম বান্দা। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন (আল্লাহ) অভিমুখী।
সুলাইমান (আ) এর সময়ে বিমান/ যুদ্ধ বিমান ছিল।
38:31 নং আয়াহ : (শুনুন সেই সময়ের কথা) যখন তার সামনে সন্ধ্যার সময়ে পেশ করা হল তিন চাকার দ্রুত গতির যানবাহন/ যুদ্ধ বিমান [22:27]।
# সম্ভবত তা বিমান বা বিমান জাতীয় কিছু ছিল। কারণ এখানে তিন চাকার কথা বলা হচ্ছে। এছাড়াও অন্য জায়গায় বলা হয়েছে- বায়ু তার অধিনে ছিল (21:81, 34:12)। বিমান তো আর ভিন্ন কিছু নয়, বায়ুকে ব্যবহার করেই ওড়ে।
সূর্যাস্ত বলে কোনও কিছু হয় না।
38:32 নং আয়াহ : তখন বললেন- “আমি ধনসম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির প্রেমে পড়ে আমার প্রভুর বিধান থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছি। এমনকি সূর্য (পৃথিবীর) আড়ালে চলে গেল!
# পবিত্র কুরআন অনুযায়ি- ‛সূর্যাস্ত’ বলে কিছু হয় না। পৃথিবীর ঘূর্ণনের (91:6, 36:38) কারণে সূর্য শুধুমাত্র দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। এই সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে (78:10)। তবে হ্যাঁ, প্রচলিত অনুবাদ গুলোতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। যদিও তা ভুল নয়, বরং শুধু প্রচলিত শব্দ গুলোর ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত বৈজ্ঞানিক ভাবে ভুল জেনেও খবরের কাগজে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সূচি দেওয়া হয়।
সুলাইমান (আ) আক্ষেপ শুরু করলেন।
38:33 নং আয়াহ : (এও বললেন) “তা (যুদ্ধ বিমান গুলো) আমার নিকটে নিয়ে এসো”। অতঃপর (তিনি আক্ষেপ করে) তাদের চাকা গুলোয় ও নাকে হাত বুলাতে লাগলেন।
আল্লাহ সুলাইমান (আ) কে যেভাবে পরীক্ষা করলেন।
38:34 নং আয়াহ : এবং অবশ্যই আমরা সুলাইমানকে পরীক্ষা করেছি। একারণে তার কুরসি/ আসনের উপর বসিয়ে দিলাম একটি একটি জিন সত্ত্বা। তারপর সে (আল্লাহ) অভিমুখী হলেন।
# আসলে সুলাইমান (আ) ধনসম্পদের প্রেমে পড়ে কিছু সময়ের জন্য আল্লাহ বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি ভেবে নিয়েছিলেন- “ধনসম্পদ ও শাসনের মালিক আমি, কৃতিত্ব আমার”। তাই আল্লাহ তার আসন/ সিংহাসনে একজন জিনকে বসিয়ে দিয়েছিলেন, যে জিন ছিল তারই অনুগত। তখন সুলাইমান (আ) বুঝতে পারলেন- “ধনসম্পদ ও শাসনের মালিক আমি নই, এর কৃতিত্বও আমার নয়”। তখন তিনি আল্লাহ অভিমুখী হলেন।
সুলাইমান (আ) যেভাবে ক্ষমা ও শাসন প্রার্থনা করলেন।
38:35 নং আয়াহ : তিনি বললেন- “হে আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন। আর আমাকে দিন এমন প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আমি ছাড়া যার অধিকারী অন্য কেউ না হয়। নিশ্চয়ই আপনি মহাদাতা”।
সুলাইমান (আ) এর নিয়ন্ত্রণে ছিল বায়ু প্রবাহ এবং গতিপথ পরিবর্তনও।
38:36 নং আয়াহ : অতঃপর আমরা বায়ুর প্রবাহকে তার (সুলাইমানের) নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিলাম। তার ইচ্ছা মতো বায়ু গতিপথ পরিবর্তন করত [34:12, 21:81]।
সুলাইমান (আ) এর নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল জিনরাও।
38:37 নং আয়াহ : আর বিভিন্ন প্রকারের শাইত্বানদেরও (তার নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছিলাম)। তারা বিল্ডিং নির্মাণ করত এবং ডুবুরির কাজ করত [34:13, 21:82]।
সুলাইমান (আ) এর নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল বহু রাজ্য এবং দেশও।
38:38 নং আয়াহ : এবং অন্যান্য (বহু রাজ্য/ দেশকে তার) নিয়ম নীতিতে আবদ্ধ করে দিলাম [27:23-42]।
আল্লাহ সুলাইমান (আ) কে বিশেষ ‛ছাড়’ দিয়েছেন।
38:39 নং আয়াহ : (তাকে বললাম) “এটা আমাদের পক্ষ হতে বিশেষ দান/ অনুগ্রহ [38:35]। এতএব চাইলে দান করুন অথবা নিজের জন্য রেখে দিন। এর কোনও হিসাব আপনার থেকে নেওয়া হবে না”।
পিতার মতোই সুলাইমান (আ) এরও ছিল মর্যাদা।
38:40 নং আয়াহ : আর নিশ্চয়ই তার জন্য আমাদের কাছে আছে নৈকট্যের মর্যাদা ও উত্তম পরিণাম/ উত্তম প্রত্যাবর্তন স্থল [38:25]।
আইয়ূব (আ) কে মানুষ ও জিন শাইত্বানরা পানি দিত না।
38:41 নং আয়াহ : আর স্মরণ করুন (সেই সময়ের কথা), যখন আমাদের বান্দা আইয়ূব তার প্রভুকে ডেকে বললেন- “নিশ্চয়ই শাইত্বান আমাকে কষ্ট দিচ্ছে ও পেরেশান [6:112] করছে” [21:83]।
# আইয়ূব (আ) ইসলাম প্রচার করছিলেন। তার এলাকার মানুষরা তার দাওয়াত গ্ৰহণ করেন নি। উপরন্তু তাকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দিতেন এবং পেরেশান করতেন। এজন্য আইয়ূব (আ) তার পরিবার পরিজনকে অন্যত্রে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে কষ্ট করে হলেও তার এলাকায় থেকে ইসলাম প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে যান, হেরে যান। তখন তিনি উপরিউক্ত প্রার্থনা করেছিলেন।
# বলে রাখা উচিৎ হবে যে, আইয়ূব (আ) সম্পর্কে যে গল্প/ কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, তা পবিত্র কুরআন বা হাদীশের কোথাও নেই। অন্যদিকে আমরা যে কাহিনী বললাম, তার পেক্ষিতে দলিল রয়েছে। পড়তে থাকুন 38:41-44 পর্যন্ত আয়াত গুলো।
আল্লাহ আইয়ূব (আ) এবং পরিবারের জন্য পানির ব্যবস্থা করলেন।
38:42 নং আয়াহ : (তাকে বললাম) “আঘাত আপনার পা দিয়ে। এটা আপনার গোসলের জন্য শীতল ও সুপেয় পানি”।
আইয়ূব (আ) তার পরিবার পরিজনদের ফিরে পেলেন।
38:43 নং আয়াহ : আর আমরা তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার পরিবারকে। আমাদের পক্ষ থেকে রহমত/ অনুগ্রহ স্বরূপ তাদের সঙ্গে তাদের মতো আরও কিছু [21:84]। আর তারাই পরামর্শ গ্ৰহণ করে, যারা বোধ বুদ্ধির অধিকারী।
# ‛আরও কিছু’ বলতে কি?? আইয়ূব (আ) তার স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যখন তারা ফিরে এলেন, তখন পুত্র ও কন্যাদের বিবাহ হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং আইয়ূব (আ) তার স্ত্রী ও পুত্র কন্যাদের তো ফিরে ফেলেন, সঙ্গে নাতি নাতনিও ফিরে পেলেন। “আরও কিছু” বলতে হয়ত এটাই বোঝান হয়েছে।
লিখে বোঝানোর নির্দেশ, লিখে বোঝালে বুঝতে সুবিধা হয়।
38:44 নং আয়াহ : (তাকে বললাম) “আপনার হাত দ্বারা ধরুন কাঠের কলম, তা দ্বারা (মানুষ ও জিনকে) বোঝান। আর প্রতিজ্ঞা/ প্রতিশ্রুতি [17:34, 5:1, 13:20] ভঙ্গ করবেন না”। আমরা তাকে পেয়েছি ধৈর্য্যশীল [46:35, 8:46] ও উত্তম বান্দা। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন (আল্লাহ) অভিমুখী।
# ভঙ্গ করা হারাম। তবে পরিস্থিতির পেক্ষিতে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা যায়। হাদীশ- “যে ব্যক্তি কোনও প্রতিজ্ঞা করে, অতঃপর দেখে যে, এ প্রতিজ্ঞার বিপরীত কাজ করাই উত্তম, তবে তার উচিৎ উত্তম কাজটি করা এবং প্রতিজ্ঞার কাফফারা/ ক্ষতিপূরণ আদায় করা” (মুসলিম, হাদীশ 1650/2)।
ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূব (আ) কেমন ছিলেন??
38:45 নং আয়াহ : আরও শুনুন ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের কথা। তারা ছিলেন (ধৈর্য্য) শক্তির ও দূরদৃষ্টির অধিকারী।
38:46 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আমরা তাদেরকে মর্যাদা প্রদান করেছিলাম (জ্ঞান অর্জনের মতো) একটি বিশুদ্ধ গুণের জন্য। (তারা ছিলেন) জ্ঞানের শহর।
38:47 নং আয়াহ : আর তারা ছিলেন আমাদের কাছে মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্যতম।
রাম ও গৌতম বুদ্ধ (আ) কেমন ছিলেন??
38:48 নং আয়াহ : আরও শুনুন ইসমাঈল, আল ইয়াসা (রাম) এবং যু্লকিফাল (গৌতম বুদ্ধের) কথা [6:86, 21:85]। আর তারা সবাই ছিলেন উত্তম বান্দাদের অন্যতম।
জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য।
38:49 নং আয়াহ : এটা (কুরআন) সংবিধান। নিশ্চয়ই মুত্তাকী (অপকর্ম থেকে দূরত্ব অবলম্বনকারী) দের জন্য থাকবে উত্তম আবাস।
38:50 নং আয়াহ : অনন্তকাল স্থায়ী জান্নাত, যার দরজা সমূহ তাদের (মুত্তাকীদের) জন্য খোলা থাকবে।
# জান্নাতের দরজা 8 টি। হাদীশ- “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করে। তারপর বলে- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনও ইলাহ নেই। তিনি এক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল”।তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামত যে কোনও দরজা দিয়েই তাতে প্রবেশ করতে পারবে”(নাসাঈ, হাদীশ 148)।
জান্নাতের আসন, ফলমূল ও পানীয়।
38:51 নং আয়াহ : তারা সেখানে উচ্চ আসন সমূহে হেলাল [76:13] দিয়ে বসবে। তারা চাইবে বিভিন্ন ধরণের ফলমূল [77:42, 50:35, 56:32-33, 69:23] ও পানিয় [83:25-28, 56:18-19]।
জান্নাতী সঙ্গী/ সঙ্গীনি।
38:52 নং আয়াহ : এবং তাদের কাছে থাকবে সমবয়সী সঙ্গী/ সঙ্গীনিরা [55:70]।
# এখানে হুরের কথা বলা হচ্ছে না, এখানে পৃথিবীর স্বামী স্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে। দেখুন 43:70 আয়াহ। যাদের স্বামী বা স্ত্রী নেই/ থাকবে না কিন্তু জান্নাতে যাবে। হুর শুধু তাদের জন্য।
জান্নাতে প্রাপ্ত প্রতিদান কখনও ফুরিয়ে যাবে না।
38:53 নং আয়াহ : এই সমস্ত প্রতিশ্রুতি হিসাব দিবসের জন্য।
38:54 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই এটা আমাদের প্রদান করা জীবিকা, যা কখনও ফুরিয়ে যাবে না [95:6, 41:8, 84:25, 56:32-33]।
সীমালঙ্ঘনকারী/ আইন ভঙ্গকারী/ উগ্ৰদের ঠিকানা জাহান্নাম।
38:55 নং আয়াহ : এটা (মুত্তাকীদের পরিণতি)। আর নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারী/ আইন ভঙ্গকারী/ উগ্ৰদের জন্য থাকবে নিকৃষ্ট আবাস।
38:56 নং আয়াহ : জাহান্নাম, তাতে তারা দগ্ধ [4:56] হবে। আর তা খুবই নিকৃষ্ট ঠিকানা [98:6]।
জাহান্নামে শীতলতা দ্বারা শাস্তি।
38:57 নং আয়াহ : এটাই (তাদের পরিণতি)। সুতরাং তারা স্বাদ গ্ৰহণ করবে তীব্র গরম পানির ও মারাত্মক শীতল পানির [14:16]।
জাহান্নামে বরফের শাস্তি।
38:58 নং আয়াহ : এবং অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে থাকবে (আগুনের) বিপরীত শাস্তিও (বরফের শাস্তি)।
# আগুনের বিপরীত শাস্তি বলতে বরফ দ্বারা শাস্তির কথা বলা হচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষীগণ বলেন- “মুহাম্মাদ শুধু গরম ও আগুন সম্পর্কে জানত, তাই শুধু গরম ও আগুনের শাস্তির কথা বলেছেন”। এই আয়াত দুটি তাদের জন্য যোগ্য জবাব।
জাহান্নামীদের মধ্যে তর্কবিতর্ক, ঝগড়া।
38:59 নং আয়াহ : (জাহান্নামীরা পরস্পরকে বলবে) “এই দল তোমাদের সঙ্গে প্রবেশ করছে। অথচ তাদের জন্য কোনও মারহাবা/ অভিনন্দন নেই। নিশ্চয়ই তারা জ্বলবে আগুনে”।
38:60 নং আয়াহ : (সাধারণ জাহান্নামীরা) বলবে- “না, বরং তোমরাও (জ্বলছ)। তোমাদের জন্যেও কোনও মারহাবা/ অভিনন্দন নেই। তোমরাই তা (জাহান্নাম) সামনে এনেছ আমাদের জন্য। এতএব (তা) কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল”।
38:61 নং আয়াহ : তারা বলবে- “হে আমাদের প্রভু, যে আমাদেরকে এর (জাহান্নামের) সম্মুখীন [37:32] করেছে, আগুনের মধ্যে তার শাস্তি বাড়িয়ে দ্বিগুণ [33:68, 7:38, 33:68] করে দিন”।
জাহান্নামীরা মূমীন/ মুসলিমদের সম্পর্কে আলোচনা করবে।
38:62 নং আয়াহ : আর তারা এও বলবে- “কি ব্যাপার, আমরা তাদের (মূমীন/ মুসলিমদেরকে) দেখছি না, যাদেরকে আমরা খারাপ/ ছোট/ নিকৃষ্ট বলে গণ্য করতাম।
38:63 নং আয়াহ : আমরা কি অযথা তাদেরকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতাম, নাকি আমাদের দৃষ্টি সমূহ ভুল দেখছে”??
38:64 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আগুনের অধিবাসীদের ঐ পারস্পরিক তর্কবিতর্ক সত্য।
নাবী (সা) মূলত ছিলেন একজন সতর্ককারী।
38:65 নং আয়াহ : বলুন- “মূলত আমি একজন সতর্ককারী মাত্র [42:48, 13:7]। আর আল্লাহ ছাড়া কোনও ঈশ্বর/ উপাস্য নেই, যিনি একক সত্ত্বা এবং প্রবলভাবে অপ্রতিরোধ্য।
আল্লাহ সমস্ত কিছুর প্রতিপালক।
38:66 নং আয়াহ : যিনি মহাবিশ্ব, পৃথিবী ও যা উভয়ের মধ্যে রয়েছে, সমস্ত কিছুর প্রতিপালক (1:1]। যিনি মহা শক্তিশালী ও মহা ক্ষমাশীল।
কুরআনের তথ্য গুলো কি উচ্চ পর্যায়ের।
38:67 নং আয়াহ : বলুন- “তা (কুরআন) মহা/ মহান তথ্যের [78:2-5] সমাহার [45:20]।
38:68 নং আয়াহ : অথচ তা হতে তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ”।
সেই যুগের মানুষ নয়, বর্তমান বিজ্ঞানও অবাক হতে বাধ্য হয়।
38:69 নং আয়াহ : (বলুন- এই রকম) “উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান আমার ছিল না [29:48, 42:52, 28:86], যা নিয়ে তারা তর্কবিতর্ক করছে [78:2-5]।
# পরীক্ষা করতে চাইলে, আপনার কোনও বিজ্ঞ ব্যক্তি/ বিজ্ঞানকে হোসেন কুরানীর অনুবাদটা দিন। প্রমাণ পাবেন হাতেনাতে, ইনশাআল্লাহ।
নাবী (সা) মূলত ছিলেন একজন সতর্ককারী।
38:70 নং আয়াহ : আমার কাছে শুধু ওহী করা হয় যে, আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী” [42:48, 13:7]।
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে ফেরেস্তাদেরকে জানালেন।
38:71 নং আয়াহ : (শুনুন সেই সময়ের কথা) যখন আপনার প্রভু ফেরেস্তাদেরকে [2:30] বলেছিলেন- “নিশ্চয়ই আমি পচা কাদা মাটি হতে একজন মানুষ সৃষ্টি করব”।
ফেরেস্তাদেরকে আল্লাহ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
38:72 নং আয়াহ : অতঃপর যখন আমি পূর্ণ বিকসিত করব এবং আমার রূহ [32:9, 17:85] প্রদান করব, তখন তোমরা তার শ্রেষ্ঠত্ব [7:11, 15:29] ঘোষণা করবে।
সমস্ত ফেরেস্তা আল্লাহর নির্দেশ মানল।
38:73 নং আয়াহ : অতঃপর সমস্ত ফেরেস্তারা শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা করল,
ইবলীস আদম (আ) কে শ্রেষ্ঠ বলে মানল না।
38:74 নং আয়াহ : ইবলীস ছাড়া। সে অহংকার করল এবং হয়ে গেল নির্দেশ অস্বীকারকারী [18:50]।
ইবলীস কেন আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিল??
38:75 নং আয়াহ : (আল্লাহ) বললেন- “কোন বিষয়টি তোমাকে তার (আদমের) শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণায় বাধা দিল, যাকে আমি আমার দু হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছি?? তুমি কি অহংকার করলে, নাকি তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন??
38:76 নং আয়াহ : (ইবলীস) বলল- “আমি তার থেকে উত্তম। আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন পচা কাদা মাটি হতে [17:62-62, 7:12]”।
আল্লাহ ইবলীসকে বিতাড়িত করলেন।
38:77 নং আয়াহ : (আল্লাহ) বললেন- “বের হয়ে যাও এখান থেকে, নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত।
38:78 নং আয়াহ : আর বিচার দিবস পর্যন্ত তোমার উপর আমার ঘৃণা থাকল”।
ইবলীস আল্লাহর থেকে অবকাশ চাইল।
38:79 নং আয়াহ : (ইবলীস) বলল- “হে আমার প্রভু, উত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন [7:14, 15:36]।
আল্লাহ ইবলীসকে অবকাশ দিলেন।
38:80 নং আয়াহ : (আল্লাহ) বললেন- “নিশ্চয়ই তুমি একজন অবকাশ প্রাপ্ত [15:37]।
38:81 নং আয়াহ : যে দিবস অবধারিত সময়ে ঘটবেই, সেই দিবস পর্যন্ত” [15:38]।
ইবলীস কাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারে??
38:82 নং আয়াহ : (ইবলীশ) বলল- “আপনার ইজ্জত/ সম্মানের শপথ, তাদের সবাইকে আমি বিভ্রান্ত [7:16-17, 15:39] করব।
38:83 নং আয়াহ : তবে আপনার বান্দাদের মধ্যে যারা একনিষ্ঠ, তারা ছাড়া” [15:40]।
ইবলীস ও তার অনুসারীদের দ্বারা জাহান্নাম
38:84 নং আয়াহ : (আল্লাহ) বললেন- “তবে তাই সত্য, আর আমি সত্যিই বলি যে,
38:85 নং আয়াহ : অবশ্যই আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব তোমার দ্বারা এবং তাদের (আমাদের বান্দাদের) মধ্যে থেকে যারা তোমার অনুসরণ [7:18, 32:13, 11:119] করবে, তাদের সবার দ্বারা”।
নাবী (সা) পারিশ্রমিক নেন নি, পারিশ্রমিক দাবিকারী ভণ্ড।
38:86 নং আয়াহ : বলুন- “আমি তোমাদের থেকে কোনও ধরণের পারিশ্রমিক/ প্রতিদান [25:57, 51:57-58, 52:40] চাই না। কেননা, আমি কোনও ভণ্ড নই”।
কুরআন মহাবিশ্ব সমূহের জন্য সংবিধান।
38:87 নং আয়াহ : তা (কুরআন) মহাবিশ্ব সমূহের জন্য সংবিধান ছাড়া কিছুই নয় [21:107]।
বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডে কুরআনের উত্তীর্ণ হওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী।
38:88 নং আয়াহ : অবশ্যই তোমরা কিছু কাল/ কয়েক শত বছর পরেই তার (কুরআনের) সত্যতার [78:2-5] সংবাদ জানতে পারবে [41:53]।