৩৭ নং সূরাহ | সূরাহ স্বাফফাত | Surah no 37 | Surah Saffat |

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। 

অর্থ- আল্লাহর নাম নিয়ে পড়া শুরু করছি, যিনি সীমাহীন দয়ালু এবং সীমাহীন করুণাময়।

নাযিল : মাক্কাহ, আয়াত : 182 টি।

নামাজীদের শপথ।

37:1 নং আয়াহ : শপথ তাদের, যারা সারিবদ্ধ/ কাতার‌বদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়।

# অনেকেই নামাজে ইমামের পিছনে সারিবদ্ধ/ কাতাববদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াতের দলিল খুঁজে পান না। এই 37:1-3 আয়াত গুলো তাদের জন্য। অনেকে 37:1-3 আয়াত গুলো‌কে ফেরেস্তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত করে দেখান। যা ‛ভুল এবং ধরে নেওয়া’। ইসলামে ধরে নেওয়ার কোনও জায়গা নেই।

# প্রশ্ন হবে- “আল্লাহ নামাজীদের শপথ করলেন কেন”?? নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়। এই তিলাওয়াত থেকে ইমামদের পবিত্র কুরআন হিফজ শক্তিশালী হয়, ধীরে ধীরে নামাজীদের‌ও পবিত্র কুরআন হিজব হয়ে যায়। এছাড়াও পবিত্র কুরআনের সঙ্গে সাধারণ মুসলিম‌দের পরিচয় ঘটে, তৈরি হয় পবিত্র কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক। এই ছাড়াও আল্লাহর আদেশ নিষেধ গুলো সাধারণ মুসলিম‌রা জানতেও পারে (যদিও আরবিতে তিলাওয়াতের জন্য ভারত উপমহাদেশের মুসলিম‌রা পবিত্র কুরআন বোঝে না, এমনকি ইমাম‌ও)। এভাবে মুসলিম‌দেরকে ইসলাম পালনের প্রতি উদ্ধুদ্ধ হতেও দেখা যেতে পারে।

   যাইহোক, সবচেয়ে বড় দিক হল- নামাজের মাধ্যমে এবং নামাজীদের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন সংরক্ষণ করা হয়। নাবী (সা) এই ব‍্যবস্থা‌ই করে গিয়েছেন (লেখা ও হিফজ)। এভাবে নামাজের মাধ্যমে নাবী (সা) এর যুগে তৈরি হয়ে গিয়েছিল হাজার হাজার হাফিজ। এরমানে হল- একজন নামাজী মূলত পবিত্র কুরআন রক্ষা করার সৈনিক। এখানে কোনও হাদীশ অস্বীকার‌কারী বলতে পারেন- “কুরআন হিফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন” (15:9)।

আপনাকে জানিয়ে রাখি- 15:9 এ এমন কিছু বলাই হয় নি। ওখানে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে- “নিশ্চয়ই আমরা ‛যিকির’ নাযিল করেছি, আমরাই তা রক্ষা করব”। যিকির অর্থ- বিধান, সংবিধান, স্মরণিকা ইত্যাদি। ধরে নেওয়া হয়- যিকির বলতে, কুরআন। কিন্তু আপনি ধরে নেবেন কেন! এই ধরে নেওয়াটা কি মানবরচিত নয়?? যা আল্লাহ বলেন নি, তা আল্লাহর নামে চালিয়ে দেওয়া কুফরী নয়??

তবে আরও বলি- হাদীশ অস্বীকার‌কারীরা নিজেদের আহলে কুরআন বলতে পছন্দ করেন বা তাদেরকে আহলে কুরআন বলা হয়ে থাকে। যদিও তারা আহলে কুরআন নন, বরং আহলে কিতাব বা খৃষ্টান। আর একারণেই হাদীশ অস্বীকার‌কারীরা নামাজ অস্বীকার করেন, মুসলিম‌দেরকে নামাজ থেকে বিরত রাখতে চান। যাতে কুরআন‌কে বিকৃত করতে পারে। যাতে নষ্ট হয়ে যায় পবিত্র কুরআন রক্ষার মাধ্যম‌টা। আর এভাবে অল্প জানা/ না জানা মুসলিমদেরকে পবিত্র কুরআন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বাইবেলের কাছাকাছি আনতে চায় বা খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে চায়। আর এভাবেই তারা সহজ সরল মনা মুসলিম‌দেরকে খৃষ্টান বানাচ্ছে। আর সত্যি এটাই- এভাবে মুসলিম‌দেরকে খুব সহজে খৃষ্টান বানান যাচ্ছে। খৃষ্টান ধর্ম প্রচার করার এই পদ্ধতিটা নতুন এবং সবচেয়ে হিসাবে কার্যকর।

পদ্ধতিটা এরকম- প্রথমে মুসলিম‌দেরকে হাদীশ বিদ্বেষী তৈরি করা হবে। তারপর মুসলিম‌দেরকে কুরআন প্রেমী তৈরি করা হবে। তারপর বলা হবে- কুরআনে কোথাও বলা নেই যে, “নাবী মুহাম্মাদ (সা) সুপারিশ করবেন। কিন্তু পবিত্র কুরআন সুস্পষ্ট ভাবে বলে যে, ঈশা (আ) সুপারিশ করবেন (5:117-118)। এত‌এব ঈশা (আ) কে মেনে চলতে হবে, তবেই মুক্তি”।

এরপর নাবী মুহাম্মাদ‌ (সা) কে নিকৃষ্ট চরিত্রের দেখানোর চেষ্টা করা হবে এবং নাবী (সা) কে ঘৃণা করতে শেখান হবে। তারপর নাবী মুহাম্মাদ (সা) এর অস্তিত্ব অস্বীকার করতে শেখান হবে। তারপর বলা হবে- “কুরআনের মুহাম্মাদ আলাদা, কুরআনের মুহাম্মাদ শব্দের অর্থ হল- প্রশংসিত ব‍্যক্তি। ওটা কারোর নাম নয়। যে আয়াত প্রচার করে, সেই হল মুহাম্মাদ। মুহাম্মাদ কারোর নাম নয়, মুহাম্মাদ নামের কেউ ছিল না”। ইত্যাদি ইত্যাদি।

জাতির প্রতি ইমামদের দায়িত্ব।

37:2 নং আয়াহ : অতঃপর শপথ তাদের, যারা (জাতিকে) কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা‌র মধ্যে বেঁধে রাখেন।

# এমনটা আজ আর দেখা যায় না। তবে একটা এমন সময় ছিল, যখন ইমামরাই মুসলিম জাতিকে কঠিন নিয়ম শৃঙ্খলা‌র বেধে রাখত। ফলে মুসলিম জাতি হয়ে উঠেছিল সুসভ্যের প্রতীক। গোটা পৃথিবী‌কে সভ‍্যতা শিখিয়ে সুসভ্যে পরিণত করছিল। এ বিষয়ে সত‍্যটা ফুটে উঠেছিল স্বামী বিবেকানন্দের কলমে, তিনি লিখছেন- “স্পেনে মূর নামক মুসলিম জাতি সুসভ্য রাজত্ব স্থাপন করল। স্থাপন করল বিশ্ববিদ্যালয়। ইউরোপ সভ‍্যতা‌র ছোঁয়া পেল। ধীরে ধীরে ইউরোপ সুসভ্য হয়ে উঠল” (স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, খণ্ড 6, পৃষ্ঠা 162, উদ্ভোধন কার্যালয়, কলকাতা)।

আজ সেই ইউরোপ নিজেদের‌কে সুসভ্য এবং পৃথিবী‌কে অসভ্য দাবি করে। তাদের দাবি- “আমরা শুধু সম্রাজ্য বিস্তার ও পৃথিবী শাসন করি নি, বরং পৃথিবী‌কে সুসভ্য বানিয়েছি। আজকের সুসভ্য পৃথিবী আমাদের দান”। কিন্তু তারা ভুলে যায়- তাদের সুসভ্য বানিয়েছে এই মুসলিম জাতি। যাদেরকে এখন তারা অসভ্য বলে মনে করে! বলা ভাল- তারা অকৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞতাটুকু স্বীকার করে নি। তবে স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম জাতির এই অবদান ভোলে নি। তারমানে, মুসলিম‌দের থেকে ইউরোপ সুসভ্য হয়েছে, তারপর ইউরোপ পৃথিবীকে সুসভ্য বানিয়েছে। তারমানে, আজকের সুসভ্য পৃথিবী মুসলিম‌দের দান।

নামাজে ইমামদের কুরআন তিলাওয়াত।

37:3 নং আয়াহ : অতঃপর শপথ তাদের‌ও, যারা যিকির/ বিধান (কুরআন) তিলাওয়াত করে শোনায় [7:204]।

আল্লাহর একত্ববাদে কোনও সন্দেহ‌ নেই।

37:4 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই তোমাদের ঈশ্বর/ উপাস্য পরম একক-ই, যা সন্দেহহীন [21:22, 23:91]।

সূর্য প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে উদিত হয়।

37:5 নং আয়াহ : তিনি মহাবিশ্ব, পৃথিবী ও যা আছে উভয়ে, সেই সমস্ত কিছুর প্রভু। আর তিনি সমস্ত উদয় স্থান গুলোর‌ও প্রভু [70:40]।

# ‛সমস্ত উদয় স্থান’ বলতে, বক্তব্য‌টি পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে পেশ করা হচ্ছে। মূলত সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত বলে কিছু নেই, হয় না। পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে সূর্য মূলত পৃথিবীর আড়ালে যায়। যা পবিত্র কুরআন অন্যত্রে তা সুস্পষ্ট করে দিয়েছে, যেমন 78:10, 38:32 ও 91:4 তে।

মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে রয়েছে গ্ৰহাণু বেল্ট।

37:6 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আমরা পৃথিবীর আশপাশের সৌরজগৎ‌কে ঘিরে [67:5] রেখেছি কাওকাব/ গ্ৰহাণু দ্বারা।

শাইত্বানদের থেকে কুরআন হিফাজত করা হয়েছিল।

37:7 নং আয়াহ : এবং অবাধ্য শাইত্বান থেকে (কুরআন হিফাজতের কাজে গ্ৰহাণু গুলোকে) ব‍্যবহার করি।

শাইত্বানদের‌কে কুরআন শুনতেও দেওয়া হয় নি।

37:8 নং আয়াহ : যেন তারা শুনতে না পায় উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন কোন‌ও কথা [26:210-212]। শুনতে চাইলেই প্রত‍্যেক দিক থেকে (গ্ৰহাণু) নিক্ষেপ করা যায়,

# শুনতে দেওয়া হয় নি বলতে, কুরআন নাযিলের পূর্বে তাদেরকে শুনতে দেওয়া হোত। বিস্তারিত জানতে 72:10 এর টিকা দেখুন।

শাইত্বানদের তাড়ানোর জন্য গ্ৰহাণু নিক্ষেপ করা হোত।

37:9 নং আয়াহ : তাদেরকে তাড়ানোর জন্য। আর তাদের জন্য থাকবে অবিরাম আযাব/ শাস্তি।

# ছোট একটি প্রশ্ন- “তখন নাহলে শাইত্বানদের তাড়ানোর জন্য গ্ৰহাণু নিক্ষেপ করা হোত, তাহলে এখন কেন গ্ৰহাণু পতন হয়”?? এখন এবং কুরআন নাযিলের পূর্বে‌ স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই গ্ৰহাণু পতন হোত। কুরআন নাযিলের সময় গ্ৰহাণু গুলোকে শাইত্বানদের তাড়ানোর জন্য ব‍্যবহার করা হোত। তবে উপরিউক্ত 4 টি আয়াত বুঝতে সমস্যা হলে 72:10 এর টিকা দেখুন।

উল্কা আসলে কি??

37:10 নং আয়াহ : তবে যে কিছু শোনার চেষ্টা করে, তখন তাকে ধাওয়া করে শিহাব/ উল্কা, যা (বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে) জ্বলে ওঠে [72:8-9]।

# আসলে ‛উল্কা’ বলে কিছু হয় না। বস্তুটা হল গ্ৰহাণু, যা 37:6-37:10 পর্যন্ত পড়লে বোঝা যাবে। যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ঘর্ষণের জন্য জ্বলে ওঠে এবং টুকরো টুকরো হয়ে যায়। আমরা এটাকেই বলি ‛উল্কা’।

মহাবিশ্ব সৃষ্টি তুলনায় মানুষ সৃষ্টি করা অনেক সহজ।

37:11 নং আয়াহ : তাদের‌কে জিজ্ঞাসা করুন- “সৃষ্টির দিক থেকে তাদের সৃষ্টি করা কঠিন, নাকি অন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছি, সেগুলো [40:57]?? নিশ্চয়ই আমরা তাদেরকে সৃষ্টি করেছি আঠাল [32:7] কাদামাটি মাটি থেকে।

# সুতরাং আল্লাহ যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে পারেন, তাহলে মানুষ সৃষ্টি করতে পারবেন না কেন?? এখানে কেউ বলতে পারেন- “মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য আল্লাহর/ স্রষ্টার প্রয়োজন ছিল না”। যদিও তাদের এই দাবি হাস‍্যকর! কেননা, এমনি এমনি কোনও কিছু সৃষ্টি হয় না। এমনি এমনি থিওরি মূলত প্রকৃতি বিরোধী। ক্রিয়া ছাড়া প্রতিক্রিয়া হয় না, এটা অবাস্তব, নিউটনের সুত্র বিরোধী।

যদিও ক্রিয়া ছাড়া প্রতিক্রিয়া হয়, তবুও তা অলৌকিকতা বলে গণ্য হবে। আর অলৌকিক‌তা ধর্মের অঙ্গ, নাস্তিকতা‌র নয়। অথচ তারা এই অলৌকিক‌তা স্বীকার করলেও, ধর্ম অস্বীকার করে! যা হাস‍্যকর। যদিও আমাদের পরিচিত স্রষ্টা ও আল্লাহর মধ্যে পার্থক্য অতুলনীয় (112:4)।

বলতে পারেন- “মহাবিশ্ব শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে”। সত্যিই তো, পবিত্র কুরআন‌ও তাই বলে (2:117)। শূন্য থেকে সৃষ্টি হল কেন?? কারণ কি?? উত্তর আছে আপনার কাছে?? পবিত্র কুরআনে উত্তর রয়েছে 21:16 তে। আপনি কোনও কিছু “শূন্য” থেকে সৃষ্টি করে দেখান। বিশ্বাস করে নেব যে, মহাবিশ্ব‌ও শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

নাবী (সা) কে তারা ব‍্যঙ্গ বিদ্রুপ করত।

37:12 নং আয়াহ : বরং আপনি অবাক হচ্ছেন, কেননা তারা (আপনাকে) ব‍্যঙ্গ বিদ্রুপ করছে [15:11, 43:7]।

তারা আল্লাহর আইন/ বিধান‌ বুঝতে চাইত না।

37:13 নং আয়াহ : আর যখন তাদেরকে বিধান/ আইন সম্পর্কে বোঝান হয়, তখন তারা বুঝতে চায় না।

# অথচ আল্লাহর আইন ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আল্লাহর আইন বলতে- সৌদি আরব, ইরান বা পাকিস্তানের আইন নয়। আল্লাহর আইন বলতে- আল্লাহ ও রাসূল প্রদত্ত আইন (47:33)।

আয়াত সম্পর্কে সেই সময়ের নাস্তিকদের বক্তব্য।

37:14 নং আয়াহ : এবং তারা আয়াত সমূহ দেখলেই ব‍্যঙ্গ বিদ্রুপ করে [21:2]।

37:15 নং আয়াহ : আর বলে- “এ তো সুস্পষ্ট জাদু ছাড়া কিছুই নয়” [34:43]।

পুনরুত্থান সম্পর্কে সেই সময়ের নাস্তিকদের প্রশ্ন।

37:16 নং আয়াহ : (আরও বলে) যখন আমরা মারা যাব, যখন আমরা পরিণত হব গ্ৰহের/ উপগ্রহের উপাদানে এবং হাড়ে, তখন কি নিশ্চিতরূপে আমাদেরকে নিঁখুত ভাবে পুনরুত্থিত করা হবে [75:3-4]??

37:17 নং আয়াহ : আমাদের পিতৃপুরুষদেরও??

পুনরুত্থান সম্পর্কে প্রশ্নের জবাব।

37:18 নং আয়াহ : বলুন- হ‍্যাঁ [23:15-16]। আর (তার সঙ্গে সঙ্গে) লাঞ্ছিত [69:16:17] করাও হবে [84:1-5]।

একটি মাত্র নির্দেশেই পুনরুত্থান কার্যকর হবে।

37:19 নং আয়াহ : মূলত তা একটি নির্দেশ [31:28], অতঃপর তারা তখন দেখবে [79:13, 36:51],

পুনরুত্থান দিবসে মানুষের প্রতিক্রিয়া।

37:20 নং আয়াহ : এবং (বলবে) হায় ধ্বংস আমাদের, এটা তো বিচার দিবস [36:52]।

আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া‌র জবাব।

37:21 নং আয়াহ : (তখন বলা হবে) “এটাই মিমাংসা দিবস [22:69], যাকে তোমরা অস্বীকার করতে [83:11-12]”।

মিথ্যা/ ভণ্ড ঈশ্বর দাবিদার‌দের পরিণতি জাহান্নাম।

37:22 নং আয়াহ : (বলা হবে) “একত্রিত কর তাদেরকে, যারা সীমালঙ্ঘন‌কারী, সীমালঙ্ঘনে তাদেরকে সাহায্য‌কারী [45:19]। আর তাদেরকে (মিথ্যা/ ভণ্ড ঈশ্বর‌ দাবীদার‌ গুলোকে), যাদের ইবাদত/ উপাসনা (১) তারা করত [21:98-99],

১) ঈশা/ যিশু (আ) কি এর মধ্যে গণ‍্য হবেন?? না, তিনি এর মধ্যে গণ‍্য হবেন না। কেননা, তিনি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেন নি। তার মিথ্যা অনুসারী‌রা তাকে ঈশ্বর বানিয়েছে। বাইবেলে ঈশা (আ) বলেছেন- “I can of Myself do nothing. As I hear, I judge; and My judgment is righteous, because I do not seek My own will but the will of the Father who sent Me” (Jhon, 5:30)। এর অর্থ হল- “আমি নিজ হতে কিছুই করতে পারি না। যেমন শুনি, তেমন বিচার করি এবং আমার বিচার সঠিক। কারণ হল- আমি নিজের ইচ্ছায় কিছুই করি না। কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, সেই পিতার/ ঈশ্বরের ইচ্ছা মতো চলি”।

এর অর্থ তিনি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেন নি, বরং তিনি নাবী, রাসূল ও মানুষ হ‌ওয়া‌র জন্য নিজের অপারগতা প্রকাশ করেছেন। বিচার দিবসে ঈশা/ যিশু (আ) খৃষ্টানদের ইবাদত অস্বীকার করবেন (46:5, 19:82)। শুধু ঈশা/ যিশু (আ) নন, বিচার দিবসে খৃষ্টান‌রাও পরিস্থিতি দেখে তাকে ঈশ্বর বলে মেনে নেবে না (30:13)। যাইহোক, যাদেরকে জোর করে ঈশ্বর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা কেউই 37:22 এর অন্তর্ভুক্ত হবেন না। যেমন, ভগবান শ্রী রাম এবং গৌতম বুদ্ধ (আমার জানা মতে- তারা নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেন নি)।

তাদেরকে জাহান্নামের পথ দেখিয়ে দেওয়া হবে।

37:23 নং আয়াহ : আল্লাহ‌কে বাদ দিয়ে। সুতরাং তাদেরকে জাহান্নামের পথ দেখিয়ে দাও” [50:24]।

জাহান্নামে দেওয়া‌র আগে তাদের‌কে প্রশ্ন করা হবে।

37:24 নং আয়াহ : তারপর (বলা হবে) তাদেরকে একটু দাঁড় করাও এবং জিজ্ঞাসা কর,

প্রশ্ন‌টা কি??

37:25 নং আয়াহ : কি ব‍্যাপার তোমরা (১) একে অপরকে সাহায্য করছ না কেন??

১) তোমরা, কারা?? সীমালঙ্ঘন‌কারী, সীমালঙ্ঘনে তাদেরকে সাহায্য‌কারী 37:22 দ্রঃ। অর্থাৎ ইহজীবনে তো একে অপরকে সাহায্য করেছিলে, এখানে করছ না কেন??

সেদিন তারা আত্মসমর্পণ করতে চাইবে।

36:26 নং আয়াহ : (কিছুই বলবে না) বরং আজ তারা আত্মসমর্পণ‌ [16:28] করতে চাইবে (এবং তারা শুধু‌ই অনুতাপ [43:39, 89:23] করতে থাকবে)।

# কিন্তু এই আত্মসমর্পণ কোনও কাজে লাগবে না, এটা ইহজীবনে করা উচিৎ ছিল (39:54)।

অপরাধীরা একে অপরের মুখোমুখি হবে।

37:27 নং আয়াহ : আর তারা একে অপরের মুখোমুখি হবে এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসা করবে,

নেতারা সহযোগী‌দের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ভুল বোঝায়।

37:28 নং আয়াহ : (সাহায্য‌কারীরা) বলবে- “নিশ্চয়ই তোমরা (সীমালঙ্ঘন‌কারী) তোমাদের ‛সর্বশক্তি প্রয়োগ করে’ আমাদের (ভুল বোঝাতে) আসতে [34:31, 40:47, 33:67]।

# এখানে আরবি শব্দ “আনিল ইয়ামীন”। যার সাধারণ অর্থ হল- ডান দিক থেকে। তবে একাধিক অর্থ করা হয়। কেউ করেছেন- দীন/ ধর্ম নিয়ে, কেউ করেছেন- মতবাদ নিয়ে, কেউ করেছেন- শক্তি/ সামর্থ্য দ্বারা। তবে আমি করেছি- “সর্বশক্তি প্রয়োগ করে”।

নেতারা মূর্খ ও উগ্র অনুসারীদের সম্পর্কে যা বলবে।

37:29 নং আয়াহ : তারা (সীমালঙ্ঘন‌কারীরা) বলবে- “না, বরং তোমরা নিজেরাই [7:39] সত্য স্বীকার‌কারী ছিলে না।

37:30 নং আয়াহ : আর তোমাদের উপর আমাদের বিশেষ কোনও কর্তৃত্ব ছিল না, বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে [34:32] উগ্র‌ (আমরা শুধু তোমাদের উগ্ৰতাকে ব‍্যবহার করেছি মাত্র)।

37:31 নং আয়াহ : এত‌এব আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রভুর কথাই সত্যে পরিণত হল। নিশ্চয়ই এখন আমাদেরকে আযাব/ শাস্তির স্বাদ উপভোগ [40:48] করতে হবে।

37:32 নং আয়াহ : তবে, আমরা নিজেরা ভ্রান্তি‌তে ছিলাম, এ কারণে নিশ্চিত‌ই তোমাদের‌কে বিভ্রান্ত করেছি।

অন্ধ অনুসারীরাও নেতার শাস্তির অংশীদার হবে।

37:33 নং আয়াহ : অতঃপর তারা শাস্তি‌তে একে অপরের অংশিদার হবে [7:38, 33:68]।

37:34 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আমরা আপরাধীদের সঙ্গে এমন‌ই করে থাকি [77:18, 10:13, 17:77]।

কেন এমন করা হবে অপরাধীদের সঙ্গে??

37:35 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই যখন তাদেরকে বলা হোত- “আল্লাহ ছাড়া কোনও ঈশ্বর/ উপাস্য নেই” [21:22, 23:91], তখন তারা অহংকার (অস্বীকার) করত।


37:36 নং আয়াহ : আর বলত- “আমরা আমাদের ঈশ্বর/ উপাস্য গুলোকে এক কবি [69:41] ও পাগলের [68:2, 51:52] কথায় পরিত্যাগ করব”??

নাবী (সা) কবি ও পাগল নন, তার প্রমাণ দিচ্ছেন আল্লাহ।

37:37 নং আয়াহ : না, বরং তিনি সত্য নিয়ে এসেছেন এবং রাসূলদের সত্যতা স্বীকার করেন।

# যদি তিনি কবি হতেন, তাহলে কবিতার মাধ্যমে নিজের বড়াই করতে পারতেন। যদি পাগল হতেন, তাহলে অন্যান্য নাবী রাসূল‌দের সম্পর্কে “সত্য ও সঠিক তথ্য” বলছেন কিভাবে?? তিনি বিভিন্ন নাবী রাসূল‌দের অনুসারী‌দের থেকে নিজের প্রতি কুমন্তব্য ও গালাগালি শোনার পর‌ও অতিষ্ঠ হয়ে তাদের নাবী রাসূল‌দেরকে গালাগালি করা তো দূরের কথা, তাদের সম্পর্কে কুমন্তব‍্য পর্যন্ত করছেন না কেন?? পাগল হলে এমনটাই ক‍রতে পারতেন। বরং তিনি সর্বদা অন্য নাবী রাসূল‌কে নিজের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান হিসাবে দেখিয়েছেন।

একটা হাদীশ দেখুন, খানিকটা বুঝতে পারবেন- “এক ইহুদী ও এক মুসলিম পরস্পর গলাগলি করল। মুসলিম বলল : তার শপথ, যিনি মহাবিশ্ব সমূহের জন্য মুহাম্মাদ (সা) কে নির্বাচিত করেছেন। ইহুদী বলল- শপথ তার, যিনি মূসা (আ) কে নির্বাচিত করেছেন মহাবিশ্ব সমূহের জন্য। বর্ণনাকারী বলেন- এমন সময় মুসলিম হাত তুলল এবং ইয়াহুদীর গালে চড় মারল। অতঃপর ঐ ইহুদী রাসূল (সা) এর নিকট গেল এবং তার ও মুসলিমের ঘটনা বলল। রসূল (সা) বললেন : তোমরা আমাকে মূসার উপর মর্যাদা দিও না। কেননা, মানুষেরা যখন (বিচার দিবসে) বেহুশ হবে। সর্বপ্রথম আমি হুশ ফিরে পাব, তখন দেখতে পাব যে, মূসা (আ) আরশের কিনারা ধরে রয়েছেন। জানি না, তিনি কি বেহুশ হয়ে আমার আগেই হুশ ফিরে পেয়েছেন, নাকি যারা বেহুশ হননি তিনি তাদের মধ্যে রয়েছেন” (মুসলিম, হাদীশ 2373/3)।

তাদের জন্য থাকবে কষ্টদায়ক শাস্তি।

37:38 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই তোমরা কষ্টদায়ক শাস্তির স্বাদ উপভোগ করবে ।

বিচার দিবসে শুধুমাত্র কর্মের প্রতিফল পাওয়া যাবে।

37:39 নং আয়াহ : আর তোমরা যা করতে, সেই আমল/ কর্মের প্রতিফল পাবে [36:54, 21:47]।

জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে কারা??

37:40 নং আয়াহ : তবে আল্লাহ‌র খালিস্ব/ বিশুদ্ধ বান্দারা রক্ষা পাবে।

জান্নাতে কি কি, কেমন, কিভাবে থাকবে??

37:41 নং আয়াহ : তাদের জন্য থাকবে নির্ধারিত রিযিক/ জীবিকা।

37:42 নং আয়াহ : তাদের জন্য থাকবে বিভিন্ন ধরণের ফলমূল [69:23, 56:20, 56:32-33] সমূহ। আর তারা হবে সম্মানিত [70:35]।

37:43 নং আয়াহ : তারা থাকবে নিয়ামতে ভরা [39:75, 56:12] জান্নাতে।

37:44 নং আয়াহ : তারা আসনের উপর পরস্পরের দিকে মুখোমুখি হয়ে বসবে [56:15-16]।

জান্নাতী মদ কেমন হবে??

37:45 নং আয়াহ : তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে মদের ঝর্ণা [47:15] থেকে তুলে আনা পানপাত্র ভর্তি মদ [56:18]।

37:46 নং আয়াহ : যা হবে উজ্বল সাদা, যা পানকারীদের জন্য সুপেয় [47:15]।

37:47 নং আয়াহ : তাতে না হবে কোনও মস্তিষ্ক বিকৃতি, আর না হবে কোনও ক্ষতি [56:19]।

# জান্নাতে মদ কারা পাবেন, সবাই?? না। তবে, তারা কারা?? উত্তর রয়েছে 56:14-26 আয়াতে।

আর থাকবে হুর।

37:48 নং আয়াহ : তাদের কাছে থাকবে সুন্দর চোখ বিশিষ্ট দৃষ্টি নতকারী [56:22, 44:54] পুরুষ/ নারী (হুর)।

জান্নাতীরা ‛দেখতে’ কেমন হবে??

37:49 নং আয়াহ : তারা (জান্নাতীরা) হবে এমন, যেন ডিমের আস্তরণের ভিতরে থাকা সুরক্ষিত কুসুম [55:70]।

জান্নাতে ইহজীবন সম্পর্কে আলোচনা হবে।

37:50 নং আয়াহ : তারপর তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করবে,

37:51 নং আয়াহ : তাদের মধ্যে হতে একজন বক্তা বলবে- “নিশ্চয়ই (পূর্ব জীবনে) আমার একজন সঙ্গী ছিল”।

জান্নাতীরা কাফির‌দের ব‍্যঙ্গ করবেন।

37:52 নং আয়াহ : সে (আমাকে) বলত- “তুমি কি (নাবী মুহাম্মাদের) আনা সত্য স্বীকার করেছ”??

37:53 নং আয়াহ : “(বলত) আমরা যখন মারা যাব, অন‍্যান‍্য পদার্থে বিলীন হয়ে যাব, হাড়ে পরিণত হব, তখন কি আমরা কর্মফল পাব”??

ফেরেস্তা‌রাও আলোচনায় অংশগ্ৰহণ করবেন।

37:54 নং আয়াহ : (ফেরেস্তা‌রা) বলবে- “আপনারা কি তাকে দেখতে চান”??

37:55 নং আয়াহ : তারপর সে [37:51] উঁকি দিয়ে দেখবে- “সে (সেই কাফির) এখন জাহান্নামের মাঝখানে”।

তারপর সেই জান্নাতী, এই জাহান্নামীকে যা যা বলবে।

37:56 নং আয়াহ : সে [37:51] বলবে- “আল্লাহর শপথ, তুমি (জাহান্নামী) তো আমাকে প্রায় ধ্বংস করেই ফেলে ছিলে!!

37:57 নং আয়াহ : যদি না আমার প্রভু অনুগ্রহ করতেন, তাহলে আমিও হতাম (জাহান্নামে) উপস্থিত‌দের একজন”।

■ ফেরেস্তাদের‌কে প্রশ্ন ■ পুনর্জন্ম নেই।

37:58 নং আয়াহ : (জান্নাতী‌রা বলবে) “আচ্ছা আমরা আর মরব না তো??

37:59 নং আয়াহ : আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর  মৃত্যু নেই তো! আর কোন‌ও শাস্তির সম্মুখীন হব না তো”??

# অনেকেই ‛অনুবাদ কুরআন’ পড়ে পণ্ডিত হ‌ওয়ার বলে থাকেন- “কুরআনে বহু আয়াত রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, পুনর্জন্ম আছে এবং তা সত্য। যেমন 2:28 নং আয়াত, এছাড়াও আরও বহু আয়াত রয়েছে”। এখন আমি আমার পাঠকদের বলব- গিয়ে একবার 2:28 দেখে আসুন তো, ঐ আয়াহ কি সত্যিই পুনর্জন্মের কথা বলছে! 

যাইহোক, এখন এই আয়াহ (37:59) সুস্পষ্ট বলছে যে, “প্রথম মৃত্যু ছাড়া আর কোনও মৃত্যু নে‌ই”। অর্থাৎ মৃত্যু শুধু একবার হবে, দ্বিতীয় মৃত্যু নেই। আরবি শব্দ গুলো খেয়াল করুন- “ইল্লা মাওতাতানাল উলা”। যদি আরবির জ্ঞান না থাকে, তাহলে কমপক্ষে কুরআনের ক্ষেত্রে নিজেকে পণ্ডিত ভাবা মূর্খ‌তা।

আল্লাহ নিজে জান্নাতীদের উত্তর দেবেন।

37:60 নং আয়াহ : (জবাবে আল্লাহ বলবেন) নিশ্চয়ই এটাই তাদের (জান্নাতীদের) জন্য মহাসাফল্য” [4:13, 5:119]।

আমাদের জন্য আল্লাহর বার্তা।

37:61 নং আয়াহ : সুতরাং এই ধরণের সাফল্যের জন্য আমল/ কর্মকারীদের আমল/ কর্ম করা উচিৎ।

আল্লাহ জাহান্নামীদের ব‍্যঙ্গ করলেন।

37:62 নং আয়াহ : এটা কি উত্তম আপ‍্যায়ণ, নাকি কুল গাছের কাঁটা??

37:63 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আমরা তা (কুল গাছ) অত‍্যাচারকারীদের জন্য করেছি ফিতনা/ বিপদ [17:60]।

জাহান্নামে কুলগাছের অবস্থান।

37:64 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই তা এমন একটি গাছ, যা জাহান্নামের তলদেশ হতে বের হবে।

ঐ কুলগাছের ফল গুলো কেমন হবে??

37:65 নং আয়াহ : এর ফল গুলো হবে শাইত্বানের মাথা সমূহের মতো।

জাহান্নামীদের একমাত্র খাদ্য হবে কুল গাছের কাঁটা।

37:66 নং আয়াহ : অতঃপর নিশ্চয়ই তারা (জাহান্নামের বাসিন্দারা) তা খাবে, আর এভাবেই তাদের পেট ভর্তি হবে [56:52-53]।

জাহান্নামীদের পানীয় কেমন হবে??

37:67 নং আয়াহ : এরপর তাদের জন্য থাকবে নক্ষত্রের প্লাজমা [56:54-55] মিশ্রিত পানীয় [38:57, 47:15]।

বাপ-দাদাদের অন্ধ অনুসারী‌রা জাহান্নামী হবে।

37:68 নং আয়াহ : তারপর তাদের‌ও গন্তব্য হবে জাহান্নাম।

37:69 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই তারা তাদের পিতৃপুরুষ/ বাপ দাদাদের পেয়েছিল পথভ্রষ্ট।


37:70 নং আয়াহ : তারপরও তারা তাদের পথেই চলে/ ছুটে ছিল [2:170, 5:104]।

আরবীয়দের পূর্বপুরুষদেরকে ‛সতর্ক’ করা হয়েছিল।

37:71 নং আয়াহ : আর অবশ্যই তাদের পূর্বে‌ই তাদের পূর্বপুরুষদের অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

37:72 নং আয়াহ : এবং অবশ্যই আমরা তাদের মধ্যে সতর্ককারীদের‌কে [35:24] প্রেরণ করেছিলাম [17:15]।

# প্রশ্ন হবে- “কমপক্ষে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে, যা বলছে যে, নাবী (স) এর সময়ে যারা ছিল, সেই সমস্ত আরবীয়‌দের পূর্বপুরুষ‌দেরকে সতর্ক করা হয় নি” (13:30, 32:3, 36:6)। এখন এই দুই আয়াত কি পরস্পর বিরোধী হয়ে গেল না?? না। না কেন?? ঐ সমস্ত আয়াত গুলোতে নাবী (সা) থেকে ইসমাঈল (আ) পর্যন্ত ধরা হয়েছে। কিন্তু এখানে ইসমাঈল (আ) এর পূর্বের পূর্বপুরুষ‌দের কথা বলা হয়েছে। মানে ইবরাহীম (আ) এবং নূহ (আ) এর যুগের কথা বলা হয়েছে। যা পরবর্তী আয়াত গুলোতে (যেমন 37:83 তে) বলা হয়েছে।

সতর্ক না হ‌ওয়া‌র পরিণতি।

37:73 নং আয়াহ : অতঃপর দেখুন- যাদের‌কে সতর্ক করা হয়েছিল, (সতর্ক না হ‌ওয়া‌য়) তাদের কি করুণ পরিণতি কি হয়েছে!

# অর্থাৎ যদি আবারও সতর্ক না হয়, তাহলে এদের‌ও হবে করুণ পরিণতি!

37:74 নং আয়াহ : তবে আল্লাহর খালিস্ব/ বিশুদ্ধ বান্দাদের কথা ভিন্ন।

নূহ (আ) এর উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে।

37:75নং আয়াহ : আর নিশ্চয়ই নূহ আমাদের‌কে ডেকে ছিল [54:10], সুতরাং আমরা কত‌ই না উত্তম ভাবে সাড়া [2:186, 40:60] দিই।

নূহ (আ) এর সময়ে বন‍্যা‌য় কারা কারা জীবিত ছিল??

37:76 নং আয়াহ : আমরা তাকে ও তার পরিবার‌কে উদ্ধার করেছিলাম মহাবিপদ হতে।

# পরিবার বলতে, পরিবারের কে কে?? তার স্ত্রী ও এক পুত্র বাদে আর যারা ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন নূহ (আ) এর পিতামাতা, অল্প কিছু সাধারণ মূমীনরা। রেফারেন্স গুলো দেখে আসুন- 66:10, 11:45, 71:28 আয়াত।

পৃথিবীর কোন অংশে নূহ (আ) এর সময়ে বন‍্যা হয়েছিল??

37:77 নং আয়াহ : এবং (ঐ এলাকার অন্য কেউ জীবিত ছিল না) শুধুমাত্র তার বংশধরদের (১) অবশিষ্ট রাখলাম।

# পৃথিবীর কোন এলাকায় নূহ (আ) এর সময়ে বন‍্যা হয়েছিল?? নূহ (আ) এর নৌকা থামে জূদী (11:45) পর্বতে। যা বর্তমানে তুর্কী‌তে অবস্থিত। তারমানে, তুর্কি‌র আশেপাশে কোথাও এই বন‍্যা হয়েছিল। কিন্তু কোথায়?? আজ থেকে 7500 বছর আগের ভূমধ্যসাগরে কৃষ্ণ সাগরের প্লাবন/ বন‍্যাকেই নূহ (আ) এর সময়ে ঘটে যাওয়া বন‍্যা হিসাবে গণ্য করা হয়।

অনেকে আবার মনে করেন- “আজ থেকে 9000 বছর আগে কৃষ্ণ সাগরের জলস্তর কমপক্ষে 100 মিটার কম ছিল। ফলত যে অঞ্চল গুলো আজ পানির নিচে চলে গেছে, সেগুলো 9000 বছর আগে মানুষ বসবাস করত। তারপর কোনও এক ধূমকেতু পড়ে ভূমধ্যসাগরে। ফলত জলোচ্ছ্বাস হয়, কৃষ্ণ সাগরে হু হু করে পানি ঢুকে পড়ে। ফলত বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়, হতে পারে তখন প্রচুর মাত্রা‌য় বৃষ্টি‌পাতও হয়েছিল”। তবে সেই সময়ে গিয়ে দেখা সম্ভব নয় যে, কিভাবে সব কিছু ঘটেছিল। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আরও উন্নত হবে, তখন হয়ত বিস্তারিত তথ্য প্রদান করতে পারব।

১) নূহ (আ) এর বংশধর‌রা হলেন ইবরাহীম (আ)। আর ইবরাহীম (আ) এর বংশ দুই ভাগে বিভক্ত। বানু ইসমাঈল ও বানু ইসহাক। বানু ইসমাঈল হলেন আরবরা বা সৌদি আরবের মানুষ‌রা। এবং বানু ইসহাকরা পরবর্তীতে বানু ইসরাঈল নামে পরিচিত লাভ করে, আর তারা হলেন বর্তমান ফিলিস্তিনের মানুষ‌রা।

37:78 নং আয়াহ : আর আমরা তার পরবর্তীদের মধ্যে তার সুখ‍্যাতি ছেড়েছি।

অন‍্যান‍্য নাবী রাসূল‌দের উপর কিভাবে দরুদ পড়তে হবে??

37:79 নং আয়াহ : (সুতরাং বলুন) মহাবিশ্ব সমূহের মধ্যে অবস্থিত ‛নূহের উপর শান্তি’।

# হাদীশ অস্বীকার‌কারীগণ এই ধরণের আয়াত গুলো দেখিয়ে বলেন- “অন‍্যান‍্য নাবী রাসূল‌দের নাম উচ্চারিত হলে বলতে হবে যে, ‛সালামুন আলা নূহ’ ইত্যাদি”। কিন্তু এখানে তো বলা হচ্ছে না যে, দরুদের পদ্ধতিটা কেমন হবে! বলা হচ্ছে- (সুতরাং বলুন) মহাবিশ্ব সমূহের মধ্যে অবস্থিত সালামুন আলা নূহ। আসলে এরা মূর্খ। বিস্তারিত জানতে দেখুন- 13:24 ও 56:26 আয়াত।

নূহ (আ) ছিলেন সৎকর্ম‌শীল ও মূমীন।

37:80 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই আমরা সৎকর্ম‌শীলদের এভাবেই প্রতিদান দিই।

37:81 নং আয়াহ : নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন আমাদের মূমীন বান্দাদের একজন।

37:82 নং আয়াহ : এরপর আমরা ডুবিয়ে দিই (নূহ ও তার পরিবার [37:76] ছাড়া) অন‍্যদেরকে [11:37:48]।

ইবরাহীম (আ) ছিলেন নূহ (আ) এর পথের অনুসারী।

37:83 নং আয়াহ : আর নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিল তার (নূহের) পথের অনুসরণ‌কারী [3:68]।

ইবরাহীমের (আ) এর মস্তিষ্ক কি রকম ছিল??

37:84 নং আয়াহ : (শুনুন সেই সময়ের কথা) যখন তার প্রতিপালকের কাছে এসেছিলেন বিশুদ্ধ মস্তিষ্ক [26:89] নিয়ে।

জাতি ও পিতাকে ইবরাহীম (আ) এর কিছু প্রশ্ন।

37:85 নং আয়াহ : যখন তিনি তার পিতা ও তার জাতিকে বলেছিলেন- “তোমরা কিসের ইবাদত/ উপাসনা করছ??

37:86 নং আয়াহ : তোমরা কি আল্লাহ‌কে বাদ দিয়ে মিথ্যা ঈশ্বর/ উপাস‍্য‌দের [46:28] পেতে চাও??

37:87 নং আয়াহ : মহাবিশ্ব সমূহের প্রতিপালক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা [1:1] কি??

পিতা ও জাতির মূর্খতা দেখে ইবরাহীম (আ) বিরক্ত হলেন।

37:88 নং আয়াহ : অতঃপর তিনি (ইবরাহীম) নক্ষত্র সমূহের দিকে (আকাশের দিকে) তাকালেন।

37:89 নং আয়াহ : অতঃপর (তার পিতা ও তার জাতি‌র পথভ্রষ্টতা দেখে) বললেন- “আমি (এসব মূর্খ‌তা দেখে দেখে) অসুস্থ হয়ে পড়ব [6:74]”।

37:90 নং আয়াহ : অতঃপর তারা (তার পিতা ও জাতির মানুষজন) তার থেকে পিঠ ফিরিয়ে চলে [21:57-58] গেল।

ইবরাহীম (আ) মূর্তি গুলোকে ‛দুটি’ প্রশ্ন করলেন।

37:91 নং আয়াহ : অতঃপর তিনি তাদের ঈশ্বর/ উপাস্য গুলোর কাছে গেলেন এবং বললেন- “তোমরা খাচ্ছ না কেন??

37:92 নং আয়াহ : তোমাদের কি হয়েছে, তোমরা কথা বলছ না কেন”??

উত্তর না পেয়ে ইবরাহীম (আ) মূর্তি ভাঙা শুরু করলেন।

37:93 নং আয়াহ : অতঃপর তিনি তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং ডানহাত দিয়ে খুব আঘাত [21:59-62] করলেন।

# মূর্তি ভাঙার বিধান রহিত (রদ) করা হয়েছে 6:108 দ্বারা। সুতরাং এখন মূর্তি ভাঙা তো দূরের কথা, মূর্তি‌দেরকে কটুক্তি বা গালাগালি‌ দেওয়া‌ও নিষিদ্ধ।

ইবরাহীমের পিতা ও জাতির মানুষ‌রা ছুটে এল।

37:94 নং আয়াহ : অতঃপর তারা (তার পিতা ও তার জাতির মানুষ‌জন) তার দিকে ছুটে এল [21:59-68]।

ইবরাহীম (আ) মানুষ‌কে বোঝানোর চেষ্টা করলেন।

37:95 নং আয়াহ : তিনি (ইবরাহীম) বললেন- “তোমরা কি তাদের উপাসনা কর, যাকে তোমরা নিজেরাই তৈরি করেছ [25:3, 16:20-21]??

37:96 নং আয়াহ : অথচ আল্লাহ তোমাদের‌কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরও, (যাদের মূর্তি) তোমরা [7:194] তৈরি করেছ” [21:63-67]।

তারা ইবরাহীম (আ) অগ্নিকুণ্ডে ফেলে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল।

37:97 নং আয়াহ : তারা (কিছুক্ষণ আলোচনার পর) বলল- “তোমরা প্রাচীর ঘেরা অগ্নিকুণ্ড তৈরি কর এবং তাতে তাকে (ইবরাহীমকে) জলন্ত আগুনে [21:68] ফেলে দাও”।

ইবরাহীম (আ) আল্লাহ আগুন স্পর্শ হতে দিলেন না।

37:98 নং আয়াহ : আর তারা তার (ইবরাহীমের) বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র [6:123, 52:42] করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা তাদের (ষড়যন্ত্রকে) ব‍্যর্থ করে [21:69-70] দিলাম।

5/5 - (1 vote)
শেয়ার করুন:

মন্তব্য করুন